Thursday, January 22, 2009

খাবার স্যালাইনের আবিস্কারক বাঙালী বিজ্ঞানীকে স্বীকৃতি দেয়া হোক



কলেরা এবং ডায়রিয়ার খাবার স্যালাইন যেটি হাজার হাজার জীবন বাঁচায় প্রতি বছর তার আবিস্কারক একজন বাঙালী । নাম হেমেন্দ্র নাথ চ্যাটার্জী । কিন্তু বিশ্বজুড়ে আজকে সবা্ই জানেন খাবার স্যালাইনের আবিস্কারক দুজন বিজ্ঞানী ‌, ডেভিড নেলিন এবং ক্যাশ ।

আজকে আমাদের কাছে খাবার স্যালাইন এতটাই পরিচিত যে শুনতে অবাক লাগতে পারে যে মাত্র ছয় দশক আগেও মুখে স্যালাইন নেয়ার কথা কার মাথায় আসেনি । ১৮৩১ সালে হারম্যান নামের আরেক বিজ্ঞানী প্রথম মানুষের শরীরে লবন জলের ঘাটতি পুরণের জন্য স্যালাইনের ধারণা দেন । ১৯১৩ সালে চিকিত্‍সাবিজ্ঞানী রজার কলেরার নিরাময়ে স্যালাইনের প্রচলন করেন ॥ কিন্তু এটি ছিল ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইনের বা ইনজেকশনের মাধ্যমে নেয়া স্যালাইন । তারপর দীর্ঘদিন এটি ছিল একমাত্র ভরসা । কলকাতার বাঙালী বিজ্ঞানী হেমেন্দ্র নাথ চ্যাটার্জী ১৯৫৩ সালে ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইনের পরিবর্তে মুখে খাবার স্যালাইন নিয়ে পরীক্ষা করে নিরীক্ষা শুরু করেন ॥ তিনি তার হাসপাতালের রোগীর উপর খাবার স্যালাইনের সফলতা দেখে ল্যানসেট জার্নালে তার ফলাফল প্রকাশ করেন ।

তার সুদীর্ঘ ১৩ বছর পর ১৯৬৮ সালে আইসিডিডিআরবির চাঁদপুরে মতলবে নেলিন এবং ক্যাশ খাবার স্যালাইনের ফিল্ড ট্রায়াল দেন । আইসিডিডিআরবি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান বিধায় রীতিমত পুকুরচুরির মত এই ট্রায়ালটিকেই সব জায়গায় খাবার স্যালাইনের যুগান্তকারী আবিস্কারের ঘটনা হিসেবে ব্যাপক প্রচার চালায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও কোথাও একটি লাইনের জন্যও হেমেন্দ্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি । চিকিত্‍সাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন মহান আবিস্কারকের পরিচিত কেউ জানেনি । উইকিপিডিয়াতে খাবার খাবার স্যালাইনের ইতিহাসে হেমেন্দ্রর নাম বলা হয়নি একটি বারের জন্যও । শুধু মেডিক্যাল হিস্টরী জার্নাল, ১৯৯৪, ৩৮: ৩৬৩-৩৯৭ তে প্রথমবারের মত একটি লাইনে তাকে অর্ধস্বীকৃতি দেয়া হয়েছে । "It is generally agreed that racism or the lack of a "scientific" rationale prevented the widespread adoption of his (hemendra's) work"


এখানে হেমেন্দ্র নাথ চ্যাটার্জীর প্রকাশিত গবেষনা পত্রটির কিছু অংশ হুবুহু তুলে দেয়া হল যাতে এই বিষয়ে কারো সন্দেহ না থাকে।

Medical history: Magic bullet: The history oral rehydration therapy:

http://www.pubmedcentral.nih.gov/articlerender.fcgi?artid=1036912

Title: Control of vomiting in cholera and oral replacement of fluid.
Chatterjee HN
Source citation: Lancet, 1953 Nov 2;2(6795):1063.
Abstract: "Control of the vomiting symptom of cholera was attempted by treatment with avomine followed by rehydration. In back-to-back cholera epidemic years in India, 59 cases and 127 cases in 1952 and 1953, respectively, were treated with avomine (25 mg; 14 mg of promethazine base and 11 mg of 8-chlorotheophylline); vomiting was often checked with use of only 1 tablet, although up to 6 tablets were administered in 1 case. Because vomiting was easily controlled by avomine, oral rehydration was possible, and the fluid replacement solution used was 4 gm of sodium chloride, 25 gm of glucose and 1000 ml of water. To check diarrhea, which avomine does not do, these cases were given the leaf juice of an Indian plant, Coleus"(for info, Neem leaf)


আবিস্কারকদের অধিকাংশই পশ্চিমাদেশের ॥ এর একটি প্রধান কারন হল সেদেশের বিজ্ঞানীরা ভাল করে জানেন কী করে আবিস্কারকের থাতায় নাম প্রতিষ্ঠা করতে হয় ॥ কোন কোন ক্ষেত্রে কাগজ কলমে প্রমাণ থাকা সত্বেও বিশাল প্রচারের বদৌলতে বিদেশী বিজ্ঞানীরা তাদের নাম প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছেন ॥ আবার দু:থজনক হলেও ব্যবসায়িক স্বার্থে অনুন্নত দেশের আবিস্কারকদের কোনঠাসা করে রেখেছে ধনী দেশগুলো । একশ' বছরের বেশী সময় ধরে মার্কনী রেডিও আবিস্কারের কৃতিত্ব পাচ্ছিল । এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে সত্য উন্মোচিত হচ্ছে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু রেডিও প্রকৃত আবিস্কর্তা । উইকিপিডিয়াতে রেডিও আবিস্কারকের প্রথম নামটি স্যার জগদীশ বসুর কিন্তু তাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন রেডিও নিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য না করাটা তার ব্যর্থতা ।

হেমেন্দ্র নাথ চ্যাটার্জীরর কে যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে জাতি হিসেবে এই বিজ্ঞানীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত্‍ । এই বিজ্ঞানী আমাদের হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাতে যে ভুমিকা রেখেছে তাকে প্রকাশ করার জন্য প্রচার মাধ্যম সহ আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত্‍।

এই হেমেন্দ্রনাথের আবিস্কারের তথ্যটি দিয়েছেন সিঙ্গাপুরে অবস্হানরত বাংলাদেশ গবেষক সরওয়ার হোসেন যিনি দীর্ঘদিন আইসিডিডিআরবিতে কর্মরত ছিলেন ।

No comments: